২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে থাকা গোপালগঞ্জ জেলার ফলাফল এবার বেশ হতাশাজনক। একসময় শিক্ষার দিক থেকে দেশের অন্যতম এগিয়ে থাকা জেলা হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জ এবার বোর্ডের মধ্যে সর্বনিম্ন পাসের হার রেকর্ড করেছে।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জে এবার মোট ৯ হাজার ৯৮৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে মাত্র ৪ হাজার ২২১ জন। জেলায় গড় পাসের হার ৪২ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ২১৬ জন শিক্ষার্থী।
জেলার কলেজভিত্তিক ফলাফলে শীর্ষে রয়েছে কাজী জহরুল হক কলেজ, যেখানে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে হাজী লাল মিয়া সিটি কলেজ, পাসের হার ৮২ দশমিক ২৮ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে মৌলভী আব্দুল হাই মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, যার পাসের হার ৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। অন্যদিকে, নেছার উদ্দিন তালুকদার উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সবচেয়ে কম ফল করেছে—সেখানে পাসের হার মাত্র ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।
গোপালগঞ্জের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ফলাফলও আশানুরূপ হয়নি। গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজে পাসের হার ৬৬ দশমিক ৯০ শতাংশ, শেখ ফজিলাতুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ৪৩ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং টুঙ্গিপাড়া সরকারি কলেজে মাত্র ১৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এমন ফলাফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, এ বছর পরীক্ষাকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতা, মামলা-মোকদ্দমা ও প্রতিকূল পরিবেশ শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে দুর্বল করেছে। অনেক শিক্ষার্থী সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। এর সঙ্গে অনলাইন ক্লাস নির্ভর পড়াশোনার সীমাবদ্ধতাও প্রভাব ফেলেছে।
তারা মনে করেন, এখনই শিক্ষা মান উন্নয়নে উদ্যোগ না নিলে জেলার সামগ্রিক শিক্ষার মান আরও নিচে নেমে যেতে পারে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং ও আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যমে গোপালগঞ্জকে তার আগের শিক্ষাগত গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
একসময় শিক্ষার দিক থেকে অনন্য উদাহরণ ছিল গোপালগঞ্জ। কিন্তু এবার বোর্ডের সর্বনিম্ন পাসের হার সেই গৌরবের সামনে প্রশ্নচিহ্ন এঁকেছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফলাফল বিশ্লেষণ করে কোথায় সমস্যা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে এবং পরবর্তী পরীক্ষায় উন্নতির চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।