৪৯ বছর মানুষের কবর খুঁড়ে সেবা—হাসপাতালে মনু মিয়া, আর ঘোড়াটিকে হত্যা করল দুর্বৃত্তরা!

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের আলগা পাড়া গ্রামের ৬৭ বছর বয়সী গোরখোদক মো. মনু মিয়া এখন শারীরিক অসুস্থতায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি।

কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে নির্মম পরিণতির শিকার হয়েছে তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী, আদরের ঘোড়া ‘বাহাদুর’। দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে ঘোড়াটিকে, যেটিকে তিনি সন্তানসম ভালোবাসতেন।

গত শুক্রবার (১৬ মে) মিঠামইন উপজেলার কাঠখাল ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামে ঘোড়াটির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। শরীরে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন ছিল, যা থেকে প্রমাণ মেলে এটি ছিলো পরিকল্পিত একটি হত্যা।

৪৯ বছরের সেবাযাত্রার এক নিঃস্বার্থ সৈনিক

মনু মিয়া ৪৯ বছর ধরে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই মানুষের জন্য কবর খুঁড়ে আসছেন। এখন পর্যন্ত তিনি নিজ হাতে ৩ হাজার ৫৭টি কবর খনন করেছেন। মৃত্যুর সংবাদ পেলেই খুন্তি, কোদাল, করাত, ছুরি, দা নিয়ে ছুটে যেতেন তিনি, মানুষের শেষ বিদায়ে সাহায্য করতে।

দূরবর্তী গ্রামে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য তিনি নিজের ধানিজমি বিক্রি করে কিনেছিলেন ঘোড়াটি। সেই ঘোড়ার পিঠেই তুলে নিতেন তার সকল যন্ত্রপাতি, আর গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটতেন নীরব এই সমাজসেবক।

ঘোড়াটি হত্যার ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়। স্থানীয়দের অনেকেই জানায়, বাহাদুর নামের ঘোড়াটি এলাকাবাসীরও খুব পরিচিত ছিল। শেষ দুই দিন ঘোড়াটিকে কাটখাল এলাকায় ঘুরতে দেখা গেছে, তবে কারা তাকে হত্যা করেছে তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

তার স্ত্রী রহিমা বেগম জানান, “তারে (মনু মিয়া) ঢাকা নেওয়ার পর ঘোড়াটার দিকে নজর দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। সে ঘোড়াটারে নিজের সন্তান থেকেও বেশি আদর করতো। এখন শুনছি মেরে ফেলছে! আমরা এর বিচার চাই।”

ঘটনার বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার জানান, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।