ভোট এলেই ব্রিজের স্বপ্ন দেখান, পরে আর খবর রাখেন না জনপ্রতিনিধিরা

নির্বাচনের সময় এলেই জনপ্রতিনিধিরা এলাকাবাসীকে প্রতিশ্রুতি দেন, দুর্ভোগ লাঘবে নদীর উপর একটি ব্রিজ করে দেবেন। প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নিলেও, পরে আর কেউ খবর রাখেন না।
এমনটাই ঘটছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নে। এখানে অন্তত ১০টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ বছরের পর বছর ধরে টাঙ্গন নদীর উপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।
স্থানীয়রা জানান, নিজেদের খরচে তৈরি করা এই বাঁশের সাঁকোই এখন একমাত্র ভরসা। প্রতিবার নির্বাচনে প্রার্থীরা এসে বলেন, এবার ব্রিজ হবে। কিন্তু কথা আর কাজে মিল নেই। প্রতিশ্রুতি কেবল কথাতেই সীমাবদ্ধ থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশালাকৃতির একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে হেঁটে পার হচ্ছেন মানুষ। পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ঝুঁকি নিয়ে সাইকেল, মোটরসাইকেল পার হয়, তবে কোনো তিন চাকার যান চলে না। বর্ষা মৌসুমে নদী পার হতে হয় নৌকায়। অন্য সময় এই সাঁকোই ভরসা। এতে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। রোগী ও গর্ভবতী নারী পার করতে গিয়ে স্বজনদের বিপাকে পড়তে হয়। শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতেও নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এলাকাবাসী বলেন, বারবার নির্বাচন এলে নেতারা এসে প্রতিশ্রুতি দেন। ভোট চলে গেলে আর কাউকে পাওয়া যায় না। এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে, অথচ সরকার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়নি।
এলাকার কৃষকরা জানান, দুই পাড়ে পাকা রাস্তা থাকলেও নদীতে ব্রিজ না থাকায় কৃষিপণ্য বাজারে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। এতে তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। আবার শিক্ষার্থীদের স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় যেতে হয় এই নদী পার হয়ে। অসুস্থ রোগী নিয়ে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে অনেক সময় মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।
১৯৯৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনসহ অনেক জনপ্রতিনিধি এ এলাকায় এসে ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কিছু হয়নি।
স্থানীয় নারী কিরণ বালা বলেন, “যুদ্ধের পর থেকেই আমরা বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলছি। দুর্ঘটনা তো লেগেই আছে। সরকার যদি একটা ছোট ব্রিজ দিত, অনেক সুবিধা হতো।”
এই বিষয়ে আকচা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান শিমলা রানী বলেন, “ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি অনেক শুনেছি। এলাকাবাসীর পক্ষে আমি অবিলম্বে ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।”
এলজিইডির ঠাকুরগাঁও নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস বলেন, “আমরা সাঁকোটি পরিদর্শন করেছি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছি। কয়েকটি ব্রিজের প্রস্তাব একনেকে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।