জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা অভিযোগ করেছেন, বিএনপি বর্তমানে তাদের নিজেদেরই পূর্ববর্তী নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বিরোধিতা করছে। শুক্রবার (১৩ জুন) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তাসনিম জারা বলেন, ঈদের আগে ঐকমত্য কমিশনে সংরক্ষিত আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তাব দেওয়ার পর বিএনপির প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, এ প্রস্তাব তারা সমর্থন করেন না। তার যুক্তি ছিল, এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা ও নারীদের অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে সময়োপযোগী নয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার পক্ষেই বিএনপি এবং বর্তমান প্রক্রিয়াই যেন বহাল থাকে—যেখানে দলের প্রধানরাই নির্ধারণ করেন কারা হবেন সংরক্ষিত নারী এমপি। ভবিষ্যতে নারীরা যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করলে তখন সরাসরি নির্বাচন নিয়ে ভাবা যেতে পারে।
ডা. তাসনিম আরও স্মরণ করিয়ে দেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি একটি নির্বাচনী ইশতেহারে নারী ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই ইশতেহারের ৩.১৩ ধারায় বলা হয়েছিল, সংসদে নারীদের কার্যকরী ভূমিকা নিশ্চিত করতে তাদের আসনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি লেখেন, বেগম খালেদা জিয়া নিজেই সে সময় বলেছিলেন, দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা নারী, যাদের পশ্চাদপদ অবস্থানে রেখে কোনো জাতির সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারী সমাজকে তাদের যথার্থ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে আর সময় নষ্ট করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
তাসনিম জারা বলেন, এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই অনেকেই বিএনপিকে ভোট দিয়েছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। যদিও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার ব্যাখ্যা এখনো বিএনপির পক্ষ থেকে আসেনি। এখন ২০২৫ সালে এসে বিএনপি বলছে সময় হয়নি—যা সেই পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ বিরোধী।
তিনি বলেন, “হয়তো আরও ১০ বছর পরে নারীদের নির্বাচনের উপযোগী অবস্থান তৈরি হবে, কিন্তু কী দেখে বোঝা যাবে সেই অবস্থা এসেছে? বিএনপি কী পদক্ষেপ নেবে নারীদের প্রস্তুত করতে? এ বিষয়ে কিছুই বলেননি সালাহউদ্দিন আহমেদ।”
তিনি আরও বলেন, “এই কাঠামোই বহাল রাখতে চায় বিএনপি, যেখানে নারী এমপিদের নির্বাচনের সুযোগ নেই, তাদের কোনো ভোটার নেই, কোনো এলাকা নেই, কেবল দলের প্রধানের মনোনয়নেই তারা সংসদে যান এবং কেবল দলের কাছে জবাবদিহি করেন, জনগণের কাছে নয়।”
“এখন কী করা যায়?”—এই প্রশ্ন রেখে তাসনিম জারা বলেন, “এখনই নারীদের সরাসরি নির্বাচনের পথ না খুললে আমরা আরও কয়েক দশক পিছিয়ে যাবো। তাই আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে। যতক্ষণ না আমাদের উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে, ততক্ষণ আমরা থামবো না।”
তিনি জানান, এ লক্ষ্যে একটি ইভেন্ট চালু করা হয়েছে, যেখানে স্বাক্ষর সংগ্রহ, খোলা চিঠি ও নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাসনিম আহ্বান জানান, এই উদ্যোগে অংশ নেওয়ার জন্য, নিজস্ব মতামত জানাতে এবং তাকে মেসেজ পাঠাতে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও কিছু কার্যক্রম নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হন এবং এই ক্যাম্পেইনে যুক্ত হতে চান, তাহলে আমাকে মেসেজ করুন।”