যুক্তরাজ্যে ব্যস্ত দিন কাটালেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের দ্বিতীয় দিন (১১ জুন) সকালে তিনি বৈঠক করেন যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জোনাথন পাওয়েলের সঙ্গে।
লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
এ বৈঠক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক উত্তাপ ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূসের এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়।
সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন লন্ডনের প্রভাবশালী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের পরিচালক বেন ব্ল্যান্ড এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. চিয়েটিজ বাজপাইয়ের সঙ্গে। এই সাক্ষাৎেও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়।
এরপর সকাল ১১টায় ড. ইউনূস চ্যাথাম হাউসে এক নীতি সংলাপে মূল বক্তা হিসেবে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিক, গবেষক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা। সংলাপে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসার কার্যকারিতা তুলে ধরেন। এই আলোচনা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে ভূমিকা রাখে।
নীতি সংলাপ শেষে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে চ্যাথাম হাউসের ম্যালকম রুমে তার সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
দিনের শেষ ভাগে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ড. ইউনূস অংশ নেন সেন্ট জেমস প্যালেসে আয়োজিত রাজকীয় নৈশভোজে। এই বিশেষ ডিনার ছিল ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের ‘দ্য কিংস ফাউন্ডেশন’-এর ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে। রাজা চার্লস নিজেও ছিলেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত, এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎও হয়।
উল্লেখযোগ্য যে, এর আগেও অধ্যাপক ইউনূস ও রাজা চার্লস (তৎকালীন প্রিন্স চার্লস) একাধিকবার সামাজিক ব্যবসা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়ন সংক্রান্ত ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁদের এই সম্পর্ক বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সচেতনতা এবং দারিদ্র্য হ্রাসে একটি প্রতীকী দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত।
ড. ইউনূসের চলমান সফরকে কেন্দ্র করে আশা করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যকার বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে।