সীমান্তে ফের রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল ফের ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিন কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে শতাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছে—এমন দাবি করছেন স্থানীয়রা। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক বিজিবি সদস্য।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গত কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন গড়ে ১০০’রও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করছে। তবে সরকারিভাবে এই সংখ্যা কম দেখানো হচ্ছে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, তাদের হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন অনুপ্রবেশ করছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (UNHCR) বাংলাদেশ সরকারকে একটি চিঠি দিয়েছে, যেখানে নতুন করে প্রবেশ করা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার জন্য আবাসনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কমিশনার মিজানুর রহমান এই চিঠির সত্যতা স্বীকার করে জানান, সরকার এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তার মতে, এ ধরনের আশ্রয়ন প্রকল্প রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনাকে আরও জটিল করে তুলবে।
সরকারি সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে UNHCR ও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। এর ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ১৩ লাখ।
এদিকে টেকনাফ-উখিয়া সীমান্তে বিজিবির সতর্কতা সত্ত্বেও প্রতিদিন অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী জানান, সীমান্তে কড়াকড়ি বাড়ানো হলেও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। নাফ নদে টহল দিতে গিয়ে বিজিবি সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ বেলাল হোসেন মারা যান।
রোহিঙ্গাদের ভাষ্য মতে, মিয়ানমারে আরাকান আর্মির নির্যাতনের কারণে তারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের জানান, রোহিঙ্গাদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার, নিপীড়ন ও তাদের বসতবাড়ি দখল করে রাখাইন (মগ) জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে আরাকান আর্মি তাদের উৎখাত করছে।
অন্যদিকে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও আরাকান আর্মির প্রভাব বাড়ছে। নাফ নদে মাছ ধরতে গিয়ে গত ছয় মাসে প্রায় দেড়শ জেলে অপহরণের শিকার হয়েছেন, মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়া পেয়েছেন তারা। সর্বশেষ টেকনাফের হ্নীলা দমদমিয়া থেকে চার জেলেকে অপহরণ করা হয়।
পটভূমি অনুসারে, ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শুরু হয় যুদ্ধ। আরসা ও আরাকান আর্মির সংঘাতে এখন পর্যন্ত শত শত রোহিঙ্গা নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন। রাখাইন রাজ্যের ৮০ শতাংশ অঞ্চল বর্তমানে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনলে এটি বাংলাদেশের জন্য নতুন নিরাপত্তা ও মানবিক সংকট ডেকে আনতে পারে।