বাংলাদেশ হবে এশিয়ার রিজিওনাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব : প্রেস সচিব

বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি আঞ্চলিক উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুক্রবার (২ মে) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা প্রায় ছয় গুণ বাড়িয়ে ৭৮ লাখ ৬০ হাজার টিইইউ’স করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এই সক্ষমতা ১২ লাখ ৭০ হাজার টিইইউ’স।
প্রেস সচিব জানান, “অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের মূল ম্যান্ডেট হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি রিজিওনাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে রূপান্তর করা। এতে দেশের অর্থনীতি একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং তরুণদের জন্য বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই হাব কেবল বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য নয়, বরং পুরো অঞ্চলের ৩০ থেকে ৪০ কোটি মানুষের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে। চট্টগ্রাম বন্দরই হবে এই কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু। এখানকার পণ্য কেবল দেশীয় বাজারেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি হবে।”
বিশ্বমানের পোর্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সহায়তা নিতে সরকার ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। শফিকুল আলম বলেন, “আমরা শুধুমাত্র অভিজ্ঞ, সফল কোম্পানিগুলোর সঙ্গেই কথা বলছি—যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭০-৮০টি বন্দর পরিচালনা করছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত চুক্তি করতে চাই।”
রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করতে বন্দরের দক্ষতা বাড়ানোকে জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেখানে দুবাইয়ে একটি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সময় লাগে ১ মিনিট, বাংলাদেশে সেখানে লাগে ৫ মিনিট। এই ব্যবধান কমাতে হবে, না হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে আগ্রহ হারাবে।”
চট্টগ্রামকে ঘিরে একটি সমন্বিত লজিস্টিকস পরিকল্পনা গ্রহণের কথাও জানান তিনি। “রোড কানেক্টিভিটি থেকে শুরু করে টার্মিনালের আধুনিকায়ন—সব কিছুতেই বিনিয়োগ আসবে বিলিয়ন ডলার পরিমাণে।”
সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমার সীমান্তে মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে তিনি জানান, “এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কোনো করিডোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে, বাংলাদেশ তা বিবেচনা করবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।”
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ রোহিঙ্গা শব্দটিই উচ্চারণ করত না। তারা বলত এফডিএমএন। এটা রোহিঙ্গাদের অধিকার অস্বীকার করার শামিল।”
আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের বিষয়ে তিনি বলেন, “আইন ভাঙলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। দলের পরিচয় নয়, অপরাধই হবে মূল বিবেচ্য।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ্ নওয়াজ।