পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ হওয়ার পর গতকাল শনিবার রোমে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ক্যাথলিক চার্চের দুই শীর্ষ নেতা—কার্ডিনাল সিলভানো মারিয়া তোমাসি এবং কার্ডিনাল জ্যাকব কুভাকাড।

দুই কার্ডিনাল পোপ ফ্রান্সিসের আজীবন দারিদ্র্য বিমোচন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধ ও পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবীর স্বপ্নের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একইসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে অবদানের জন্য তাঁরা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁকে ‘পোপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ উল্লেখ করে, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করার জন্য ধন্যবাদ জানান।

সাক্ষাৎকালে অধ্যাপক ইউনূস স্মৃতিচারণ করে বলেন, পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন এমন একজন নেতা, যিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে আপন করে নিতেন। তিনি জানান, তাঁর লেখা ভ্যাটিকান ব্যাংক সংস্কার সংক্রান্ত সমালোচনামূলক চিঠি ভ্যাটিকানের সরকারি পত্রিকায় প্রকাশ করাই প্রমাণ করে পোপের উদার মানসিকতা।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, পোপ তাঁকে চার্চের দরিদ্রবান্ধব উদ্যোগ সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে রোমে ‘পোপ ফ্রান্সিস-ইউনূস থ্রি জিরো ক্লাব’ উদ্বোধন করা হয়, যার লক্ষ্য ‘শূন্য বেকারত্ব, শূন্য সম্পদ মজুদ এবং শূন্য নেট কার্বন নির্গমন’ অর্জন করা।

কার্ডিনাল তোমাসির সঙ্গে বৈঠক:
জেনেভায় জাতিসংঘ অফিসে ভ্যাটিকানের সাবেক স্থায়ী পর্যবেক্ষক কার্ডিনাল তোমাসি ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন। ইউক্রেন ও গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় পোপের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন দুজনই। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়েও তাঁরা আলাপ করেন, যেখানে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।

কার্ডিনাল তোমাসি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী নতুন পোপ পোপ ফ্রান্সিসের সরলতা ও আন্তঃদেশীয় সংলাপের ধারা বজায় রাখবেন।

কার্ডিনাল কুভাকাডের সঙ্গে সাক্ষাৎ:
এর আগে বিকেলে ভ্যাটিকানের আন্তঃধর্মীয় সংলাপ দপ্তরের প্রধান কার্ডিনাল জ্যাকব কুভাকাডের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক হয়। কুভাকাড জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা হবে, যেখানে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতারা অংশ নেবেন।

প্রধান উপদেষ্টা দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশ সব নাগরিকের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

সাক্ষাতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, ভ্যাটিকানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আরিফুল ইসলাম এবং ইতালিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত রকিবুল হক।