গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহে জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়ে। বৈশ্বিক উষ্ণতা, জলবায়ু পরিবর্তন আর বৃক্ষহীনতা যখন অতিরিক্ত গরমের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন প্রশান্তি পেতে ইসলামের আলোকিত জীবনব্যবস্থার দিকে ফিরে যাওয়াই হতে পারে সঠিক পথ।
ইসলামের চিরন্তন নির্দেশনাগুলো শুধু আত্মিক শান্তি দেয় না, বরং শারীরিক ও সামাজিক পরিত্রাণের পথও দেখায়। চলুন, গরম থেকে বাঁচতে ইসলাম কী পরামর্শ দিয়েছে তা জেনে নিই।
ইসতিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা
পবিত্র কুরআনের নূহ (আ.)-এর কাহিনিতে উল্লেখ আছে, যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, “তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি পাঠাবেন, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান ও নদনদী সৃষ্টি করবেন।” (সূরা নূহ, আয়াত ১০-১২)।
ইসতিগফার মানুষের অন্তরের প্রশান্তির পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকেও রক্ষা করতে পারে। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতিগফার করবে, আল্লাহ তার সব দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন এবং অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে রিজিক দেবেন।” (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫১৮)
দোয়া করা
তীব্র গরমে দোয়া হতে পারে এক বড় আশ্রয়। প্রাকৃতিক পরিবর্তন আল্লাহরই ইচ্ছায় ঘটে, তাই তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত। রাসুল (সা.) এমন এক দোয়া শিখিয়েছেন যা আল্লাহর ক্রোধ থেকে রক্ষা পেতে সহায়ক। দোয়াটি হলো:
اللهم إني أعوذ بك من زوال نعمتك، وتحول عافيتك، وفجاءة نقمتك، وجميع سخطك।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহের অপসারণ, নিরাপত্তার পরিবর্তন, হঠাৎ শাস্তি ও আপনার সবধরনের অসন্তোষ থেকে আশ্রয় চাই। (মুসলিম: ২৭৩৯)
বৃক্ষরোপণ
তীব্র গরমের অন্যতম কারণ পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা, বিশেষ করে বৃক্ষহীনতা। রাসুলুল্লাহ (সা.) গাছ লাগানোর ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, “যদি কিয়ামত এসে পড়ে আর তোমার হাতে একটি গাছের চারা থাকে, কিয়ামত শুরু হওয়ার আগেই তা লাগিয়ে দাও।” (আদাবুল মুফরাদ: ৪৮১)
গাছ শুধু ছায়া দেয় না, পরিবেশ শীতল রাখে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে। তাই গরম থেকে মুক্তি পেতে আমাদের দায়িত্ব গাছ লাগানো ও পরিবেশ রক্ষা করা।
শেষ কথা
দাবদাহের এই সময়টিতে শুধু শরীরিক প্রস্তুতি নয়, আত্মিক প্রশান্তির জন্যও প্রস্তুত থাকা দরকার। ইসলাম আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ গাইডলাইন দিয়েছে। গরম হোক বা শীত—সব বিপর্যয় থেকে বাঁচতে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া এবং তাঁর নির্দেশনা মেনে চলাই সর্বোত্তম পথ।