ফিলিস্তিনের গাজার খান ইউনিসে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সহায়তা নিতে আসা অসহায় জনতার ওপর ট্যাংক ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে অন্তত ৫১ জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (১৭ জুন) দিনগত দুপুরে ইসরায়েলি বাহিনী প্রথমে ড্রোন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং পরে ট্যাংক থেকে সরাসরি শেল ছোড়ে। লক্ষ্য ছিল একটি অস্থায়ী ত্রাণকেন্দ্র, যেখানে খাদ্য, পানি ও ওষুধ সংগ্রহে অপেক্ষমাণ ছিলেন শতাধিক বেসামরিক মানুষ। মুহূর্তেই রক্তাক্ত হয়ে ওঠে আশপাশের এলাকা।
ঘটনার পর স্থানীয় নাসের হাসপাতালে আহতদের ঢল নামে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ধারণক্ষমতার বাইরে রোগী আসায় অনেককে মেঝেতে শুয়েই চিকিৎসা দিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যেহেতু অ্যাম্বুলেন্স সহজলভ্য নয়, তাই অনেককে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বেসরকারি গাড়ি, রিকশা ও এমনকি গাধার গাড়িতে করেও।
একইদিনে গাজার অন্যান্য অংশেও ইসরায়েলি গুলিবর্ষণ ও বিমান হামলায় আরও অন্তত ১৪ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ফলে মঙ্গলবার একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৫ জন ফিলিস্তিনি।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে গত তিন সপ্তাহে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বারবার সরবরাহ লাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানালেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল এই হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গাজার জনগণের ওপর এই ধরনের নিরীহ মানুষঘেঁষা হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে। শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”
গত অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের পর থেকে গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক সংকট বিরাজ করছে। খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় প্রতিদিনই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। আর এই নতুন হামলা পরিস্থিতিকে আরও করুণ করে তুলেছে।