টানা কয়েকদিন ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান হামলা-পাল্টা হামলায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সর্বশেষ গত শুক্রবার ভোরে তেহরানসহ ইরানের একাধিক পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।

এতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় এবং ইরান পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে।

প্রতিশোধমূলক এ হামলায় ইরান অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। এতে দেশটির বহুল প্রশংসিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’সহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি চাপে পড়ে যায় বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের গবেষক মুহাম্মদ সেলুম আল জাজিরাকে বলেন, “আয়রন ডোম মূলত স্বল্পপাল্লার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার জন্য তৈরি। কিন্তু এখন যেসব হামলা ইরান চালাচ্ছে, তা অনেক বেশি জটিল—যেমন ক্রুজ মিসাইল, ব্যালিস্টিক মিসাইল ও হাইপারসনিক মিসাইল। এই অস্ত্রগুলো ঠেকানো আয়রন ডোমের সক্ষমতার বাইরে।”

তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েলের কাছে ‘অ্যারো ১’ এবং ‘অ্যারো ৩’ নামে আরও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, যা প্রায় ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় গিয়ে শত্রুপক্ষের মিসাইল ধ্বংস করতে পারে। ‘ডেভিড স্লিং’ নামের একটি মাঝারি পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও আছে, যা ২০ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম।”

তবে মুহাম্মদ সেলুম সতর্ক করে বলেন, “ইসরায়েলের এসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত এবং সমন্বিত হলেও চরম মাত্রার ও বহুমুখী হামলার মুখে এগুলো কার্যকর রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত ৪৮ ঘণ্টার ঘটনাই তার প্রমাণ।”

এদিকে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যে মধ্যস্থতা চেষ্টায় নেমেছে ফ্রান্স। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। ম্যাক্রোঁ তাকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি রক্ষায় “উত্তেজনা এড়াতে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের” আহ্বান জানান।

তিনি আরও আহ্বান জানান, ইরান যেন যত দ্রুত সম্ভব পারমাণবিক আলোচনার টেবিলে ফিরে আসে। তবে ইরানি প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে দেন, “ইসরায়েলের হামলা চলতে থাকলে ইরান আলোচনায় অংশ নেবে না।” রোববারের নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনা বাতিলের ঘোষণার মধ্যেই ইরান এই বার্তা দেয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরনের সামরিক উত্তেজনা শুধু দুই দেশ নয়, গোটা অঞ্চলকেই অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। তাই এই মুহূর্তে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় উদ্যোগ জরুরি হয়ে উঠেছে।