মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং সামরিক নেতাদের অবস্থান লক্ষ্য করে ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তেহরান। ইতোমধ্যে পাল্টা হামলাও চালিয়েছে দেশটি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যকে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (CSIS)-এর সিনিয়র অ্যাডভাইজার এবং মধ্যপ্রাচ্য কর্মসূচির পরিচালক মোনা ইয়াকুবিয়ান বলেন, “ইসরায়েল যেসব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে, তা জানার পর আমার মনে হয়েছে, পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধাবস্থার আশঙ্কা এই প্রথম এতটা প্রকট হলো।” তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বক্তব্যে ইরানে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে, যা উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—“যতদিন প্রয়োজন, ততদিন এই অভিযান চলবে।” এই ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে আগের বছরের সীমিত পাল্টাপাল্টি হামলার চেয়ে এবার অনেক বড় পরিসরে সংঘাতের ইঙ্গিত মিলেছে বলে মনে করছেন ইয়াকুবিয়ান। তার মতে, পরিস্থিতি যত দীর্ঘায়িত হবে, ততই অনিচ্ছাকৃত সংঘাত ও কৌশলগত ভুলের ঝুঁকি বাড়বে।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিক সামরিক সক্ষমতায় ইরান বর্তমানে বিশ্বে ১৪তম অবস্থানে, আর ইসরায়েল রয়েছে ১৭তম স্থানে। তবে নির্দিষ্ট ক্ষেত্র অনুযায়ী পার্থক্য রয়েছে।
সামরিক ব্যয়: ইসরায়েল প্রতি বছর প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ২৪৪০ কোটি ডলার ব্যয় করে, যেখানে ইরানের বাজেট প্রায় ৯৯৫ কোটি ডলার। সামরিক ব্যয়ে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ইসরায়েলের অবস্থান ১৯তম, আর ইরান রয়েছে ৩৩তম।
সৈন্য সংখ্যা: ইরানের নিয়মিত সেনা সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ ৮০ হাজার, যেখানে ইসরায়েলের আছে ৬ লাখ ৭০ হাজার। রিজার্ভ সৈন্যেও ইরান এগিয়ে।
বিমান শক্তি: ইসরায়েলের কাছে ৬১২টি সামরিক বিমান রয়েছে, যেখানে ইরানের আছে ৫৫১টি। যুদ্ধবিমানের সংখ্যাতেও ইসরায়েল এগিয়ে—২৪১টি বনাম ইরানের ১৮৬টি।
ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান: ইরানের ট্যাংকের সংখ্যা ১৯৯৬টি, যেখানে ইসরায়েলের আছে ১৩৭০টি। সাঁজোয়া যানেও ইরান অনেক এগিয়ে—প্রায় ৬৫ হাজারের বেশি।
আর্টিলারি ও রকেট লঞ্চার: ইরানের এমএলআরএস ইউনিট ৭৭৫টি এবং সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি ৫৮০টি। ইসরায়েলের এমএলআরএস সংখ্যা মাত্র ১৫০টি, তবে সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি ৬৫০টি।
নৌবাহিনী: ইরানের কাছে রয়েছে ১০১টি যুদ্ধজাহাজ, যার মধ্যে রয়েছে ৭টি ফ্রিগেট, ২১টি টহল জাহাজ এবং ১৯টি সাবমেরিন। ইসরায়েলের যুদ্ধজাহাজ ৬৭টি, ফ্রিগেট না থাকলেও রয়েছে ৪৫টি টহল জাহাজ এবং ৫টি সাবমেরিন।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ৯টি দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে—যার মধ্যে ইসরায়েল অন্যতম। ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ নয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগোচ্ছে।
সম্প্রতি ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, ইরান ‘১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরির উপযোগী উপাদান’ হাতে পেয়ে গেছে। শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের নাতাঞ্জসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।