আগামী ২২ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাসের আগেই এতে থাকা ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. আনু মুহাম্মদ।
শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি’ আয়োজিত “বাজেট : দেড় দশকের অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতির গতিপথ” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন লেখক কল্লোল মোস্তফা, গবেষক মাহা মির্জা প্রমুখ।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “এই বাজেটে দেখা যাচ্ছে সুদের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যদিও এর জন্য বর্তমান সরকার এককভাবে দায়ী নয়, এর ভিত্তি তৈরি করেছে আগের সরকার। তবুও এখনকার প্রেক্ষাপটে সুদের এই হার জনগণের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারের যে সংস্কার কমিশন ও কমিটিগুলো রয়েছে, তারা বারবার সুপারিশ দিলেও সেগুলো বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এই কমিশনগুলো আসলে কি শুধুই অলংকার হিসেবে কাজ করছে? সংস্কারের নামে যদি কেবল প্রতিবেদনের স্তূপ হয়, তা দেশের কোনো কাজে আসবে না। আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাই— সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
আনু মুহাম্মদ সরকারের তথাকথিত ‘মেগা প্রকল্প’ নির্ভর উন্নয়ন চিন্তার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “সরকার বলছে তারা মেগা প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। কিন্তু বাস্তবে যেসব প্রকল্প চলমান— যেমন রূপপুর, রামপাল, মাতাবাড়ি— সেগুলো এখনো বহাল তবিয়তে চলছে। এসব প্রকল্পের আবার নতুন বরাদ্দও থাকছে বাজেটে। এই প্রকল্পগুলো পরিবেশবিনাশী, ব্যয়বহুল এবং জনগণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।”
তিনি বলেন, “সরকার এখন যদি প্রকৃত বিকল্প চিন্তা করতে চায়, তাহলে জাতীয় সক্ষমতা বিকাশে বিনিয়োগ করতে হবে। যদি আমরা নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনে সক্ষমতা গড়ে তুলতে পারি, তাহলে অনেক কম খরচে জ্বালানি পাওয়া সম্ভব। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির বোঝা কমবে এবং বিদেশনির্ভর বিপজ্জনক প্রকল্পের প্রয়োজন হবে না।”
আনু মুহাম্মদ বলেন, “এবারের বাজেটে আগের ধারাবাহিকতারই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। উন্নয়ন যেন শুধু শিরোনামে আছে, বাস্তবে তার প্রভাব জনগণের জীবনে নেতিবাচক। বাজেটে এমন কোনো দিকনির্দেশনা নেই, যেটা জনগণের জীবনমানের বাস্তব উন্নয়ন ঘটাবে।”
প্রস্তাবিত বাজেট পাসের আগে সংশোধনের জোর আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “২২ জুন বাজেট পাসের আগেই আমরা চাই এতে যেসব ত্রুটি রয়েছে, তা সংশোধন করা হোক। না হলে এই বাজেট হবে জনগণের ওপর আরেকটি চাপ এবং বিভ্রান্তিকর উন্নয়নের ধারাবাহিকতা।”