প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ১৮, ২০২৫, ১০:১৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১৪, ২০২৫, ৯:৪৯ এ.এম
নির্বাচনের সময় নিয়ে ঐকমত্যে সরকার ও বিএনপি
বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার জট অনেকটাই খুলে গেছে। লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়েছে।
এতে দেশজুড়ে জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটেছে এবং জাতি এক ধরনের স্বস্তি পেয়েছে বলে মত দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল শুক্রবার (১৩ জুন) যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশ নেন উভয় পক্ষের কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি। আলোচনার পর এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগেই—অর্থাৎ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এর আগে, ৬ জুন ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণায় বিএনপির পক্ষ থেকে প্রকাশ্য অসন্তোষ জানানো হয়। যদিও সূত্র জানায়, সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ফেব্রুয়ারি সময়সীমার পরামর্শ দিয়েছিলেন আগে থেকেই।
লন্ডন বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার অবস্থানে কিছুটা নমনীয়তা আসায় বিএনপির নেতারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “এই বৈঠক ঘিরে যে সংশয় ছিল, তা অনেকটাই কেটেছে। অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমান—দুজনেই রাষ্ট্রনায়কসুলভ বিচক্ষণতা দেখিয়েছেন।”
যদিও নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকার ও বিএনপির এই সমঝোতা সব দলকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যৌথ ঘোষণার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এনসিপির প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং সংস্কারের রোডম্যাপ চূড়ান্ত না করে কেবল একটি দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা কতটা গ্রহণযোগ্য, তা ভেবে দেখা দরকার।
বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সরকারের পক্ষে বক্তব্য দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং বিএনপির পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তাঁরা জানান, একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং উভয় পক্ষই আলোচনায় সন্তুষ্ট।
তবে বৈঠকে নির্বাচনের সময়সীমা ছাড়া সংস্কার, বিচার কিংবা জুলাই সনদ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়নি। খসরু মাহমুদ বলেন, “জুলাই সনদ এবং সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা এগোতে চাই। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং শিগগিরই সিদ্ধান্ত হবে।”
এদিকে, ঢাকায় বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “যেখানে চারপাশে অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হচ্ছিল, সেখানে এই বৈঠক জাতিকে আশাবাদের আলো দেখিয়েছে।”
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারেক রহমান আলোচনার সময় নির্বাচন বিষয়ে দলের প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকেও তাঁর অবস্থান জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের নির্ধারিত সময়কে এগিয়ে আনার সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নিতে সম্মত হন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, যদি প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় এবং সংস্কার ও বিচার সংক্রান্ত অগ্রগতি যথাযথ হয়, তাহলে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা না হলেও নির্বাচন কমিশন শিগগিরই আনুষ্ঠানিক তারিখ জানাবে বলে আশা প্রকাশ করেন খলিলুর রহমান। অন্যদিকে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা এবং খালেদা জিয়ার বিচার-প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি বলে জানানো হয়।
সামগ্রিকভাবে, রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক এবং যৌথ বিবৃতিকে একটি গঠনমূলক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর বাকি, তবুও বলা যায়—নির্বাচনের পথে জাতি কিছুটা হলেও এগিয়ে গেছে।