ইরানে হামলার আগেই ইসরায়েলকে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র

ইরানে গতকাল শুক্রবার চালানো নজিরবিহীন হামলার ঠিক আগে ইসরায়েলকে শত শত হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র গোপনে সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা গেছে, হামলার মাত্র তিন দিন আগে, গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ইসরায়েলে পাঠায় প্রায় ৩০০টি লেজারনিয়ন্ত্রিত হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র। যদিও সে সময় হোয়াইট হাউস ও ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছিল, তারা ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনার পক্ষে।
মিডল ইস্ট আই-কে দেওয়া বক্তব্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের হামলা পরিকল্পনা সম্পর্কে পূর্বেই অবগত ছিল। বিপুল পরিমাণে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহই তার প্রমাণ। তবে ইসরায়েলে এই অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি এতদিন অপ্রকাশিত ছিল।
হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত আকাশ থেকে স্থলভিত্তিক নির্ভুল হামলার জন্য ব্যবহৃত হয়। যদিও এটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিস্ফোরণের জন্য উপযোগী নয়, তবে ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে হত্যা বা নির্দিষ্ট স্থাপনায় নিখুঁত হামলায় এটি কার্যকর।
গতকালের ভয়াবহ হামলায় অংশ নেয় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ১০০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান। নির্ভুল শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই বাহিনী ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীদের নিশানা করে।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন— আইআরজিসি প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলি শামখানি প্রমুখ।
এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানান, হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার সময় ও স্থানের ওপর নির্ভর করে। তবে ইসরায়েলের জন্য এই মুহূর্তে এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর অস্ত্র।
মিডল ইস্ট আই-এর আরও দাবি, চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে ইসরায়েলের একতরফা হামলার পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-কে অবহিত করা হয়। এই পরিকল্পনায় ছিল নির্ভুল নিশানা ব্যবস্থা, সাইবার হামলার কৌশল ও সামরিক রূপরেখা। ট্রাম্প প্রশাসন সেই পরিকল্পনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছিল বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানায়, হামলার আগে ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের পরিকল্পনায় বাধা দেওয়ার ‘ভান’ করেছিল, বাস্তবে কোনো বাধা দেয়নি। ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ইরানকে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে আসতে ৬০ দিনের সময় দিয়েছিলেন। গত মার্চে ইসরায়েলি গণমাধ্যম সেই সময়সীমার তথ্য প্রকাশ করেছিল। এরপরই গতকাল হামলা চালায় ইসরায়েল।
যদিও এপ্রিলের ১২ তারিখে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান আলোচনায় বসে, তবে ঠিক ৬১ দিন পরই ইসরায়েল হামলা চালায়। আলোচনার আড়ালে এই পুরো সময়জুড়েই যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ অব্যাহত রাখে।
দুই মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, অস্ত্র সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে জনসমক্ষে কিছু জানাতে হয়নি। কারণ, ৭৪০ কোটি ডলারের পূর্ব-অনুমোদিত অস্ত্রচুক্তির আওতায় এই সরবরাহ সম্পন্ন হয়।
রয়টার্সকে দেওয়া অপর দুই মার্কিন কর্মকর্তার তথ্যমতে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে মার্কিন বাহিনী সরাসরি ইসরায়েলকে সহায়তা করে। ফলে এই হামলা আর শুধুমাত্র ‘ইসরায়েলি পদক্ষেপ’ থাকেনি—বরং এতে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় অংশগ্রহণও প্রকাশ্যে এসেছে।