বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন

চলনবিলের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন আগাম বন্যার পানিতে থই থই করছে।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাঠজুড়ে শতাধিক বিঘা জমির কাঁচা ও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরসমান পানি। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা নৌকা, কলার ভেলা ও পলিথিনের তৈরি ভেলায় করে ধান কাটার চেষ্টা করছেন।
হামকুড়িয়া গ্রামের কৃষক মোঃ সামসুল আলম বলেন, “ব্রি-২৯ জাতের ধান পাকার আগেই পানিতে তলিয়ে গেছে। অর্ধেক জমির ধান কাটতে পেরেছি, বাকিগুলো এখনো পানির নিচে। মজুরি অনেক বেশি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদের আগে ও পরে শ্রমিক পাওয়া খুব কঠিন। দিন দিন আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।”
একই এলাকার কৃষক মহারম আলী জানান, “১০ বিঘা জমিতে ধান ছিল, যা দিয়ে সারা বছর সংসার চলার কথা। কিন্তু ধান পাকার আগেই পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন কী করবো, বুঝতে পারছি না।”
নাদোসৈয়দপুর গ্রামের কৃষক রবিউল করিম বলেন, “আমার ৫ বিঘা জমির বোরো ধান পানিতে ডুবে গেছে। এখনো কাটতে পারিনি। বিঘাপ্রতি আট-নয় হাজার টাকা মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলন ভালো হলেও এবার আমাদের ক্ষতি হবেই।”
স্থানীয়রা জানান, আকস্মিক বন্যার কারণে মূলত ব্রি-২৯ বা নাবী জাতের বোরো ধান চাষিরা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। যদিও আগাম জাতের ধান যারা চাষ করেছিলেন, তারা বন্যার শুরু হওয়ার ১০-১৫ দিন আগেই ধান কেটে ঘরে তুলেছেন।
ঘরগ্রাম এলাকার কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, “তাড়াশ সদর, সগুনা, মাগুড়াবিনোদ ও নওগাঁ ইউনিয়নের অন্তত ২৫-৩০টি গ্রামের পাকা ধানের জমিতে এখন হাঁটু বা কোমর সমান পানি। এ এলাকার কৃষকের ঘরে এবার ঈদ নেই। জমির ধান কাটতে শ্রমিক ও হারভেস্টারের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছি।”
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ বোরো ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে চলনবিলের নিম্নাঞ্চলে নাবী জাতের ধান নিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঈদের ব্যস্ততা থাকলেও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া ও পানি প্রবেশ করায় বিলের নিম্নাঞ্চলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই। তারপরও কৃষক ভাইদের বলবো, যতটা সম্ভব দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলুন। আশা করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই ধান কাটা সম্পন্ন হবে।
-মোঃ ফরহাদ হোসেন, তাড়াশ।