প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ১৮, ২০২৫, ৮:২৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১৩, ২০২৫, ৯:৫৬ এ.এম
চরম ভোগান্তির আরেক নাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চার লেন প্রকল্প

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার চারলেন প্রকল্প এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে! ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের এই অংশে নানা জায়গায় খানাখন্দ আর ধুলোবালির সমস্যা নিয়ে চলাচল করে পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন নিয়মিত ঘটছে দুর্।
বৃষ্টির জন্য খানাখন্দরে জমেছে পানি এতে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। গত ৫ বছরে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫৭%। আর এই দীর্ঘসূত্রতার মূল্য দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যাত্রায় এই সড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে আছে যানজট।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকল্প এলাকায় মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে বৃষ্টির সময় পানি জমে থাকে । জেলা শহরের বিরাশার বাসস্ট্যান্ডে গ্যাস ফিল্ডের সামনে বিশাল খানাখন্দ দেখতে জলাশয়ের মত। এখনে প্রতিনিয়তই দেখা যায় বাস-মালামাল বোঝাই ট্রাক এই জলাশয় থেকে উঠতে না পেরে আটকে পড়ে। গত ৪ জুন ভোর রাতে ২শত সিলিন্ডার গ্যাস বোতল ট্রাক গর্তে পড়ে উল্টে যায় আর একের পর এক সিলিন্ডার বোতল ফিস্ফোরণ হতে থাকে যা এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এছাড়াও বৃষ্টিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে এমন অবস্থা প্রকল্প শুরু থেকে। চার লেন সড়ক উন্নীতকরণ কাজের জন্য দুর্ভোগের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, আশুগঞ্জ ও বিশ্বরোড গোলচত্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বিরাসার, ঘাটুরা, তন্তর, রাধিকা ও উজানিসার। বৃষ্টি হলেই খানাখন্দে জমে পানি মহা সড়কে লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। এদিকে শুষ্ক সময়ে মনে হয় কুশায়ার চাদরে ঢাকা কিন্তু বাস্তবে সেগুলো রাস্তার ধোলাবালি যান চলাচলের কারনে উড়ছে। ফলে যাত্রীদের শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হতে হয়।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত পুরোপুরি চার লেন মহাসড়ক হচ্ছে না। প্রকল্পের ৩টি প্যাকেজের মধ্যে একটি প্যাকেজ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না প্রকল্পের অন্য দুই প্যাকেজের কাজও। এজন্য আরও ২ বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের ৫ বছর মেয়াদকালে গড়পড়তায় কাজ হয়েছে অর্ধেকের চেয়ে কিছু বেশি।
প্রকল্পের আওতায় ৩টি প্যাকেজে মোট ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার জন্য ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সাথে চুক্তি হয়। ভারতীয় ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা এবছরের ৩০ জুন। শুরু থেকে নানা কারণে পিছিয়ে যায় প্রকল্পের কাজ।
গত ৫ই আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলে যায় নিজ দেশ ভারতে।এই সড়ক নির্মাণ কাজ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।কয়েক মাস পর তারা ফিরলেও কাজ চলতে থাকে কচ্ছপের গতিতে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলেন, কাজের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৫৭ ভাগ।প্রকল্পের অনুমোদিত মেয়াদ আগামী মাসেই অর্থাৎ জুনে শেষ। সেক্ষেত্রে আমাদের কাজ যেহেতু এখনো বাকি এবং বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের কাজ দেরি হয়েছে। সেকারণে আমরা নতুন করে ২ বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি।‘বর্তমানে যে দুটি প্যাকেজের কাজ হচ্ছে সেটি ঢাকা-সিলেট এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা মহাসড়কের অংশ। ৩৯ কিলোমিটারের মধ্যে ৩১ কিলোমিটার সড়ক আমরা চালু করে দিয়েছি। বাকি সাড়ে ৭ কিলোমিটার সড়ক অত্যন্ত দুরাবস্থায় রয়েছে। যেগুলো রিপিয়ার করে আমরা যানবাহন চলাচলের উপযোগী রাখছি। এগুলোতে পারমানেন্ট কাজ করে দুই লেন চালু করার প্রক্রিয়া রয়েছে। রাস্তা যে গর্ত রয়েছে তা সাময়িক সময়ের জন্য ইট দিয়ে মেরামত করার জন্য কাজ করছে লোকজন। তবে বৃষ্টি আসলে যান চলাচলের কারনে গর্তগুলো আগের মত হয়ে যায়।
৫ বছরেও শেষ হয়নি প্রকল্প, বরং বাতিল হয়েছে ১১ কিলোমিটার। প্রশ্ন হচ্ছে – এই 'উন্নয়নের' খেসারত জনগণকে আর কতদিন দিতে হবে?
-মোঃ খোকন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সেলিমা শিরীণ খান
সম্পাদক : এ.এস.এম. জিয়া উদ্দিন খান
নির্বহিী সম্পাদক : ফেরদ্দৌসী খান লিয়া
সহকারী সম্পাদক : আবুল ফাত্তাহ সজু
বার্তা সম্পাদক :
সম্পাদক কর্তৃক - ২৩৩ , শফি মন্জিল , মডেল স্কুল রোড, গোপালগঞ্জ থেকে প্রকাশিত।
Copyright © 2025 Daily Shirin