প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ২১, ২০২৫, ১১:২০ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১২, ২০২৫, ১১:২০ এ.এম
নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে কাজ শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে দেশের পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এলো, যখন নির্বাচন কমিশন (ইসি) পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরকে সম্ভাব্য সময় ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে এখন হাতে আছে আরও প্রায় ১০ মাস, যা কমিশনের জন্য প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাড়তি সময় এনে দিয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, ঈদের ছুটির কারণে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর এখনো কমিশনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি। তবে ছুটি শেষে আগামী রোববার থেকে নির্বাচনসংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা, রোডম্যাপ ও প্রস্তুতি কার্যক্রম নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করবে কমিশন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, তার মধ্যে রয়েছে: ছবিসহ হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রস্তুত, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দল ও দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নির্বাচনের সরঞ্জাম কেনাকাটা, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।
অনেক প্রস্তুতিই তফসিল ঘোষণার আগেই সম্পন্ন করতে হয়। এই প্রস্তুতিগুলো ইতোমধ্যে চলমান রয়েছে।
ঈদুল আজহার আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে।”
তিনি আরও জানান, এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করবে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, কে এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নিয়মিত প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য ছিল জুলাই মাসের মধ্যে নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা এবং ডিসেম্বর নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতি নেওয়া। এখন হাতে বাড়তি সময় থাকায় এসব প্রস্তুতিতে গতি আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। তবে যেহেতু নির্বাচন হবেই, আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। ইতোমধ্যে রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে কিছু কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”
ভোটার তালিকা আইনের আওতায় নির্বাচন কমিশন প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে থাকে। চলতি বছরের হালনাগাদ কার্যক্রমে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে যাদের বয়স ১৮ পূর্ণ হবে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ৬০ লাখের বেশি নতুন ও বাদ পড়া ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০ লাখের বেশি মৃত ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করে তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী, এই তালিকা চূড়ান্ত করা হবে আগামী ২ মার্চ। ফলে এপ্রিলে ভোট হলে হালনাগাদ তালিকায় যুক্ত সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, এবং নির্বাচনী আচরণবিধিসহ কিছু আইন ও বিধিমালা সংস্কারের কাজও এগিয়ে চলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার ভিত্তিতে এসব সংস্কার কার্যক্রম চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে। জুলাই মাসের মধ্যে ঐকমত্য সনদ তৈরি হলে, জুলাই-আগস্ট নাগাদ সংশ্লিষ্ট আইন সংস্কার করা সম্ভব হবে।
ভোট পরিচালনার জন্য রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় তফসিল ঘোষণার সময়। সাধারণত জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইসির কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
নির্বাচন বিশ্লেষক ও সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এখন তাদের হাতে আরও সময় এসেছে, যা প্রস্তুতির জন্য ভালো সুযোগ। আশা করি, ইসি সময়মতো প্রস্তুতি শেষ করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে।”