প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ২১, ২০২৫, ৬:৩৩ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১২, ২০২৫, ১০:৩৩ এ.এম
বিদেশে অর্থ পাচারে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ কথা ভাবছে সরকার

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পরিচালিত সম্পদ পুনরুদ্ধার অভিযানে এই বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গভর্নর মনসুর বলেন, অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর মামলাগুলোর ক্ষেত্রে দেওয়ানি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে এবং সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আর্থিক সমঝোতা অন্যতম উপায় হতে পারে।
তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনার শাসনামলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক মামলা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ অন্তত ১০ কোটি ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর সরকার অভিযোগ করে, গত সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।
গভর্নর মনসুর বলেন, “যদি অপরাধের মাত্রা তুলনামূলকভাবে হালকা হয়, তবে আমরা দেওয়ানি ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং তাতে আর্থিক সমঝোতা হতে পারে একটি সম্ভাব্য পথ।” যদিও তিনি এখনো নির্দিষ্টভাবে কাউকে এ ব্যবস্থার আওতায় আনার উদাহরণ দেননি।
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তী প্রশাসন ইতোমধ্যে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক তদন্ত শুরু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনার পরিবার ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো। পাশাপাশি কিছু অভ্যন্তরীণ ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহায়তায় পাচারকৃত অর্থ শনাক্ত ও ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। এই লক্ষ্যে ইউনূস তার আসন্ন যুক্তরাজ্য সফরে আরও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, “এটা চুরি হওয়া অর্থ। আইনগতভাবেই এবং আমি বলব নৈতিকভাবেও যুক্তরাজ্যের উচিত এই অর্থ শনাক্ত করতে সহায়তা করা।”
এ প্রসঙ্গে একটি শ্বেতপত্রে সরকার অনুমান করেছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।
এ অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, জাল ঋণ এবং সরকারি প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা বলছেন, এই অভিযান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ। দলটির কার্যক্রম বর্তমানে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আন্তর্জাতিক মামলার ব্যয় নির্বাহে বাংলাদেশ এখন লিটিগেশন ফান্ডিং-এর দিকে নজর দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর মনসুর। এর আওতায় বিদেশি অর্থায়নকারী সংস্থাগুলো মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় বহন করে থাকে এবং বিনিময়ে মামলায় জয়ের পর পুরস্কার বা সমঝোতার নির্ধারিত অংশ পায়।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক লিটিগেশন ফান্ডার অমনি ব্রিজওয়ে ইতোমধ্যে ঢাকায় সফর করে গভর্নরসহ দেশের ১৬টি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেছে।
সংস্থাটির এনফোর্সমেন্ট বিভাগের প্রধান উইগার উইলিঙ্গা জানান, “আমরা বিশেষভাবে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ও খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে ব্যাংক খাতকে সহায়তা করতে আগ্রহী।”
গভর্নর মনসুর বলেন, “আমরা এই ফান্ডিং চ্যানেলের প্রতি আগ্রহী এবং এখন পর্যন্ত যে সাড়া পেয়েছি, তা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। আশা করছি, আন্তর্জাতিক মামলায় ব্যয় নির্বাহের বড় অংশ এখান থেকে আসবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী বছরের এপ্রিল মাসেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই সময়ের মধ্যেই দেশের বৃহত্তম দুর্নীতির অভিযোগগুলোর তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি চায় সরকার।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সেলিমা শিরীণ খান
সম্পাদক : এ.এস.এম. জিয়া উদ্দিন খান
নির্বহিী সম্পাদক : ফেরদ্দৌসী খান লিয়া
সহকারী সম্পাদক : আবুল ফাত্তাহ সজু
বার্তা সম্পাদক :
সম্পাদক কর্তৃক - ২৩৩ , শফি মন্জিল , মডেল স্কুল রোড, গোপালগঞ্জ থেকে প্রকাশিত।
Copyright © 2025 Daily Shirin