দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বেড়েছে রপ্তানি

জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
পোশাক, ফার্নিচার, কাগজ ও কাগজজাত পণ্য, ইলেক্ট্রিক যন্ত্রাংশ, জাহাজ, গুঁড়া মসলা ও চা—এমন ৩২টি প্রধান পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে এই সময়কালে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে ৪৪ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এ সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১০ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বেশি।
সরকার চলতি অর্থবছরে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। ১১ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪৪৯৪ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য, যা কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা ৪৫৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের চেয়ে সামান্য (১.৫ শতাংশ) কম হলেও মোট প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের তুলনায় স্পষ্টত ভালো। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রপ্তানি ছিল ৪৪৪৬ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান নিট ও ওভেন পোশাক খাতের। এককভাবে এই দুটি খাতেই অর্জিত হয়েছে মোট রপ্তানির ৮১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। নিট পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং ওভেন পোশাকের প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। এছাড়া হোমটেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানিও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
চামড়াজাত পণ্য, চামড়াবহির্ভূত জুতা ও ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতির রপ্তানিও ভালো প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। এই বৈচিত্র্য রপ্তানি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিস্তৃত বাজার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলস (OTEXA)–এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গড়ে ৭৮.৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি–এপ্রিল) দেশটি ২৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আমদানি বেড়েছে ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ হারে, যা অন্য যেকোনো উৎসের তুলনায় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।
এই সময়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পোশাকের মূল্য ছিল ২৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থমূল্যে যদিও ভিয়েতনাম ও চীনের পরে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ, তবে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষে আছে।
বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তা মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “গত কয়েক বছর অতিরঞ্জিত প্রবৃদ্ধির হিসাব দেওয়া হয়েছিল। আমরা এখন বাস্তব প্রবৃদ্ধির পথে ফিরেছি। বিপ্লব-পরবর্তী অস্থিরতা কাটিয়ে বিনিয়োগ বেড়েছে এবং পুরোনো ব্যবসায়ীরা উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছেন, পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তারাও যুক্ত হয়েছেন। ফলে প্রকৃত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, “আমাদের সক্ষমতা ৭০ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে রয়েছে। সরকার যদি সক্রিয় সহযোগিতা দেয় এবং একটি রাজনৈতিক সরকার স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে, তবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত হবে।”
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পলিসি ও প্ল্যানিং বিভাগের পরিচালক আবু মোখলেছ আলমগীর বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর অস্থিরতা ছিল, কিন্তু দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতি আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কেউ অর্ডার বাতিল করেনি, বরং যথাসময়ে সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ায় আমাদের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে।”
তিনি যোগ করেন, “বিশ্ববাজারে শুধু পোশাক নয়, অন্যান্য পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করছেন, ফলে সামগ্রিক রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে।”