ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সাম্প্রতিক পাঁচ দফা পরমাণু আলোচনা কার্যত ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
একাধিক কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে যে ইসরায়েল এখন ইরানের ওপর হামলা চালানোর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ঘোষণায় জানান, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের বিপজ্জনক অঞ্চলগুলো থেকে কিছু কর্মীকে সরিয়ে নিচ্ছে। নিরাপত্তা হুমকির মুখে মার্কিন দূতাবাসগুলো থেকে ‘অ-জরুরি’ কর্মী ও তাদের নির্ভরশীলদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিশেষ করে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে কর্মী হ্রাস এবং বাহরাইন ও কুয়েত থেকেও একই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ওয়াশিংটনের আশঙ্কা, ইসরায়েল যদি ইরানে হামলা চালায়, তবে তেহরান পাল্টা জবাবে ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে।
ট্রাম্প তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেন, “ইরানকে পরমাণু অস্ত্র অর্জনের অনুমতি দেওয়া হবে না। আমরা তা কখনোই মেনে নেব না।”
অন্যদিকে, একই দিনে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি সংঘাত শুরু করে, তবে আঞ্চলিক সামরিক ঘাঁটিগুলো আমাদের নিশানা হবে। আমরা জানি সেগুলো কোথায়, প্রয়োজনে হামলা চালাতে দ্বিধা করব না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আল্লাহ চাইলে যুদ্ধ এড়ানো যাবে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। তবে সংঘাত হলে যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।”
ইতিমধ্যে ব্রিটেনও সতর্কবার্তা জারি করেছে। তাদের নৌবাহিনী-পরিচালিত ইউকে মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস উপসাগরীয় অঞ্চলে জাহাজ চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়। সেই চুক্তির বিকল্প খোঁজার লক্ষ্যেই এপ্রিল থেকে পাঁচ দফা আলোচনা শুরু হয়, যা এখন স্থবির হয়ে পড়েছে।
ট্রাম্প তার সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি শুরুতে আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ইরান কৌশলগতভাবে সময়ক্ষেপণ করছে। ইসরায়েলকেও আমি এখন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছি, কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।”
এদিকে ওয়াশিংটন পোস্ট-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে সম্ভাব্য ইসরায়েলি হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চূড়ান্ত সতর্কতায় রয়েছে। যদিও হামলার নির্দিষ্ট সময়সীমা সম্পর্কে এখনো কিছু নিশ্চিত নয়।