এনসিটিবি অনুমোদিত পাঠ্যবইয়ে সাহাবিদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য!

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অনুমোদিত উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি প্রথম পত্র বইয়ে ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সাহাবিদের নিয়ে আপত্তিকর ও বিদ্বেষমূলক শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিশদ তথ্য ও বইয়ের নির্দিষ্ট উদ্ধৃতি দিয়ে পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, এনসিটিবির অনুমোদিত বিভিন্ন প্রকাশনার বইয়ে হযরত মুয়াবিয়া (রা.), হযরত আমর ইবন আস (রা.), হযরত উসমান (রা.) ও অন্যান্য সম্মানিত সাহাবিদের সম্পর্কে ‘কুচক্রী’, ‘ধূর্ত’, ‘ক্ষমতালোভী’, ‘শঠ’, ‘বিশ্বাসঘাতক’ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে—যা শিক্ষার্থীদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
কী বলছেন অধ্যাপক ইব্রাহীম খলিল?
তিনি লিখেছেন, “উচ্চ মাধ্যমিকে ইসলামের ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় বিষয়। কিন্তু কয়েকটি বইয়ে সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা একেবারেই সম্মানহানিকর। একজন শিক্ষার্থী এই শব্দগুলোর মাধ্যমে সাহাবিদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পেতে পারে, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
তিনি আরও বলেন, “ইতিহাস বিশ্লেষণে পার্সপেক্টিভ থাকা জরুরি। পাশ্চাত্য প্রভাবিত ভাষায় সাহাবিদের ব্যাখ্যার চেয়ে বরেণ্য আলিমদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সম্মানজনক ভাষা ব্যবহার করাই শ্রেয়। এনসিটিবি যেন দ্রুত এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আলিমদের মতামত নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।”
বিতর্কিত বই ও মন্তব্যসমূহ
ড. খলিল তার পোস্টে চারটি বইয়ের উদাহরণ তুলে ধরেছেন, যেখানে স্পষ্টভাবে সাহাবিদের নিয়ে নেতিবাচক শব্দচয়ন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:
“কুচক্রী মুয়াবিয়া খলিফার নির্দেশ অমান্য করেন” – (গ্লোব লাইব্রেরী)
“ধূর্ত ও কপট আমর … সরলমতি আবু মুসাকে বুঝালেন” – (গ্লোব লাইব্রেরী)
“উসমান (রা.)-এর দুর্বলতা তার দুর্ভাগ্যের অন্যতম কারণ ছিল” – (লেকচার পাবলিকেশন্স)
“আয়েশা (রা.)-এর বিদ্বেষ” – (অক্ষরপত্র প্রকাশনী)
অধ্যাপক খলিল দাবি করেন, এসব বইতে সাহাবিদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেন তারা ক্ষমতার লোভে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। অথচ ইসলামী ঐতিহ্যে সাহাবিদের প্রতি সম্মান দেখানো ঈমানের অংশ হিসেবে বিবেচিত।
কী হতে পারে পরবর্তী পদক্ষেপ?
সমালোচকরা বলছেন, পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস উপস্থাপন করতে গিয়ে সম্মানিত ইসলামী ব্যক্তিত্বদের মানহানিকর ভাষায় চিত্রিত করা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এনসিটিবি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত বইগুলো পুনঃমূল্যায়ন করে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়ন করে—এমনটাই দাবি উঠছে ইসলামিক স্কলারদের পক্ষ থেকে।
ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ঘিরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।