গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ১০৮

মুসলিমদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার মধ্যেও থেমে থাকেনি ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন। রোববার দিনভর গাজা উপত্যকায় চালানো বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০৮ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন আরও ৩৯৩ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর থেকে গাজায় টানা সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF)। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি অভিযানে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪,৮৮০ জন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ২৬ হাজার ২২৭ জন।
রোববারের ভয়াবহ হামলাটি এমন এক সময় ঘটলো, যখন বিশ্বের মুসলিমরা ঈদ উদযাপনে ব্যস্ত। অথচ গাজার রাস্তায় তখন বয়ে যাচ্ছে রক্তের নদী। ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র—কোনো স্থানই রেহাই পায়নি ইসরায়েলি গোলাবর্ষণ থেকে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় গাজা নিয়ন্ত্রিত সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এতে ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান।
গত ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্রের চাপে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল ইসরায়েল। তবে সেই শান্তি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৮ মার্চ থেকে ফের শুরু হয় দ্বিতীয় দফার হামলা, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এই দফায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৬০৩ জন নিহত এবং প্রায় ১৪ হাজার ৬৮৬ জন আহত হয়েছেন।
IDF জানিয়েছে, এখনও হামাসের হাতে অন্তত ৩৫ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের উদ্ধারের লক্ষ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। অপরদিকে, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই হামলাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেও তা উপেক্ষা করে যাচ্ছে নেতানিয়াহুর সরকার।
গাজার পরিস্থিতি এখন মানবিক বিপর্যয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে। খাদ্য, চিকিৎসা, পানি—সবকিছুরই তীব্র সংকট। হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই, মরদেহ রাখতে পর্যন্ত যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। আন্তর্জাতিক আদালত (ICJ) ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ফের একটি দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। নেতানিয়াহু প্রস্তাবে সম্মত হলেও, হামাস এখনও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি।