একদিনে নিহত ৪০, গাজায় থামছে না লাশের মিছিল

ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান ও স্থল হামলায় আবারও রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে আরও ৪০ নিরীহ ফিলিস্তিনি। একইসঙ্গে আহত হয়েছেন অন্তত ১২৫ জন। এ নিয়ে চলমান আগ্রাসনে নিহতের মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫২ হাজার ৫৩৫ জনে— যা মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহ চিত্রই তুলে ধরে।
তুরস্কভিত্তিক বার্তাসংস্থা আনাদোলু ও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রোববার (৪ মে) পর্যন্ত গত দেড় বছরে ইসরায়েলের দফায় দফায় চালানো হামলায় গাজার ভবন, হাসপাতাল, স্কুল এমনকি আশ্রয়কেন্দ্র পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হামলায় এখন পর্যন্ত আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৯১ জনে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন, যাদের উদ্ধার কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের এই আগ্রাসন শুধু একটি ভূখণ্ড দখলের লড়াই নয়, বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত গণহত্যা। জাতিসংঘ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন। খাদ্য, পানি ও ওষুধের অভাবে মারাত্মক মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।
২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গাজায় একপাক্ষিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তবে চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে ফের নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৪৩৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৬ হাজার ৪৫০ জন। এই ধারা চলতে থাকলে মানবিক বিপর্যয়ের মাত্রা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত বছরের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলমান রয়েছে।
মানবতার এই চরম লঙ্ঘন বিশ্ব বিবেককে কতটা নাড়া দিতে পেরেছে—তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তবে ফিলিস্তিনের নিরস্ত্র জনগণ এখনো প্রতিরোধে অনড়, তাঁদের আশা—একদিন শান্তি ফিরে আসবে।