বাংলাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবী এবং জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে দেশে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রাজনৈতিক মহল, আইন অঙ্গন ও শুভানুধ্যায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে এক অপূরণীয় শূন্যতা।
রোববার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে রাজধানীর ধানমণ্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) এই বরেণ্য আইনজীবী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “আমি তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।” একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁর মতো প্রাজ্ঞ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তির মৃত্যু এক গভীর ক্ষতি। তাঁর সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্ব সর্বদা জনকল্যাণে ভূমিকা রাখত।”
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং দ্য ল’ কাউন্সেল নামক একটি খ্যাতনামা আইন ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন এবং দেশে ফিরে ১৯৮৬ সালে আইন পেশায় যুক্ত হন। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করায় তাকে রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। একপর্যায়ে তিনি দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং ১১ বছর পর ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরে পুনরায় সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হন।
মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে বাদ এশা। দ্বিতীয় জানাজা আজ সোমবার সকাল ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এবং তৃতীয় জানাজা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজায় দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সহকর্মীরা অংশ নেবেন।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট, আইনজীবী সমাজ এবং রাজনৈতিক মহলে এই মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আইন ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তার অবদান যুগের পর যুগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে।