কাশ্মির সীমান্তে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে টানা ১১ রাত ধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ রবিবার (৪ মে) রাতেও দুই দেশের সেনাদের মধ্যে তীব্র গোলাগুলি চলে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ওই গোলাগুলিতে এখন পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেহেলগাম হামলার পর থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একতরফাভাবে গুলিবর্ষণ করছে। এ পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মিরের কুপওয়ারা, বারামুলা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধার, নওশেরা, সুন্দরবনি ও আখনুর সেক্টরে ছোট অস্ত্রের গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। ভারতীয় সেনারা এ ঘটনায় ‘পাল্টা জবাব’ দিয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দেশটির সংবাদমাধ্যমও রবিবার রাতের গোলাগুলি নিয়ে নীরব রয়েছে।
এই সংঘর্ষ এমন সময়ে ঘটছে, যখন এপ্রিলের ২২ তারিখ পেহেলগামের প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এরপর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার কূটনৈতিক ও সামরিক টানাপড়েন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
এই গোলাগুলির মধ্যেই দুই দেশ পরস্পরের একেকজন সেনাসদস্যকে আটক করেছে। ভারতীয় বিএসএফ সদস্য পূর্ণম কুমার সাহু গত ২৩ এপ্রিল সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানে ঢুকে পড়েন। পরে তাকে আটক করে পাকিস্তান রেঞ্জার্স। জবাবে ভারতের বিএসএফ ৩ মে রাজস্থানে এক পাকিস্তানি রেঞ্জারকে গ্রেফতার করে।
পেহেলগাম হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, আতারি সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনতি ঘটানোর ঘোষণা। ভারতের দাবি, ওই হামলায় সীমান্তপারের সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
উত্তরে পাকিস্তান ভারতের সব ধরনের বাণিজ্যিক লেনদেন বন্ধ করে দেয় এবং আকাশসীমাও ভারতীয় বিমান চলাচলের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। এমনকি তৃতীয় দেশের মাধ্যমেও বাণিজ্য বন্ধ করে দেয় তারা।
এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পাকিস্তান শনিবার “আবদালি” ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে। ৪৫০ কিমি রেঞ্জের এই ক্ষেপণাস্ত্র “সিন্ধু মহড়া”-র অংশ হিসেবে চালানো হয়েছে। ভারতের কর্মকর্তারা একে “উস্কানিমূলক পদক্ষেপ” হিসেবে দেখছেন।
দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে চলমান এই সীমান্ত সংঘর্ষ ও কূটনৈতিক উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য নতুন আশঙ্কা তৈরি করছে।
