পদ্মা সেতু এলাকায় ছয় কিলোমিটার যানজট

ঈদুল আজহা সামনে রেখে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় পদ্মা সেতু সংলগ্ন এলাকায় ঘরমুখো মানুষের ভিড় এবং যানবাহনের চাপ বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়, যা শ্রীনগরের বেঁজগাও পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে—দূরত্ব প্রায় ছয় কিলোমিটার।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন থাকা মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আল আমিন হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হঠাৎ গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পায়। পরে বেলা ১১টার দিকে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। তবে যানজট পুরোপুরি না কাটায়, গাড়িগুলো ধীরগতিতে চলছিল।
সড়কে ভোগান্তির অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন পটুয়াখালীগামী যাত্রী মো. সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, “সাধারণত শ্রীনগর থেকে টোল প্লাজা পর্যন্ত মাত্র ১০ মিনিট লাগে। কিন্তু আজ সময় লেগেছে প্রায় এক ঘণ্টা। এরপরও ঈদের আনন্দে তেমন বিরক্ত লাগছে না।”
এদিকে গ্রিনলাইন পরিবহনের যাত্রী শরীফুল ইসলাম বলেন, “পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঈদযাত্রা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। তবে সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। আজ এক্সপ্রেসওয়েতে ৪০ মিনিট আটকে ছিলাম।”
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, যানবাহনের চাপ সামলাতে টোল প্লাজার উভয় প্রান্তে ১৬টি বুথ চালু রয়েছে। প্রতিটি গাড়ি গড়পড়তায় কয়েক সেকেন্ডেই টোল পরিশোধ করছে। যাত্রী ও যানবাহনের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য সেতু বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত দিয়ে মোট ৩৭,৪৬৫টি যানবাহন পার হয়েছে, টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পার হয়েছে ২৪,০০৯টি যানবাহন, টোল এসেছে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকার বেশি। জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পার হয়েছে ১৩,৪৫৬টি গাড়ি।
তবে ঈদযাত্রার ভিড়ের মধ্যেই ঘটেছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বুধবার দিবাগত রাতে মাদারীপুরের শিবচরে বন্দরখোলা এলাকায় গরুবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী বিল্লাল মণ্ডল (৬৫)। তিনি খুলনা থেকে গরু নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন, যাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে উন্নত চিকিৎসার জন্য।
শিবচর হাইওয়ে থানার ওসি জহিরুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পর হাইওয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে এবং আহতদের হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।
ঈদে বাড়ি ফেরার আনন্দ যেমন অশেষ, তেমনি নিরাপদ যাত্রাও নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও জনবল মোতায়েন। বিশেষ করে পদ্মা সেতু ও সংযোগ সড়কগুলোতে যানজট কমাতে বাড়তি নজরদারি জরুরি বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।

.