৪ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের হোগলাপাশা গ্রামে পরিবেশ সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। “প্লাস্টিক দূষণের অবসান” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে ছিল র‍্যালি, মানববন্ধন, আলোচনা সভা ও বৃক্ষরোপণ। আয়োজনটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’, ‘ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ’ এবং ‘পাথরঘাটা উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’। দিনব্যাপী এ কর্মসূচিতে স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী ও বিভিন্ন যুব সংগঠনের প্রতিনিধি ছাড়াও সচেতন নাগরিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনোজ কুমার কীর্তনীয়া। বক্তব্য রাখেন পাথরঘাটা উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি প্রভাষক আহসান হাবীব, সমাজকর্মী মেহেদী সিকদার, সুন্দরবন যুব ফোরামের সভাপতি ইমরান হোসেন, তারুণ্যের বাংলাদেশ যুব সংস্থার সভাপতি সোয়েব তাসিন, আবাসনের বাসিন্দা ইদ্রিস আলী ও হাবিবুর রহমান এবং উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও ‘ধরা’ পাথরঘাটার সমন্বয়ক শফিকুল ইসলাম খোকন।

বক্তারা বলেন, পরিবেশ রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি নয়, বরং জীবনের প্রয়োজন। ইসলাম, হিন্দু, খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মেই পরিবেশ সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে। অথচ আমরা নিজেরাই প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলে, গাছ কেটে ও পানি দূষণ করে পরিবেশ ধ্বংস করছি। তারা বলেন, সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ না নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা থেকে কেউ রেহাই পাবে না। এখনই সময় সচেতন হয়ে পরিবেশ রক্ষায় একযোগে কাজ করার।

আবাসনের বাসিন্দারা জানান, তারা দুই বছর ধরে সেখানে বসবাস করছেন, কিন্তু এখনও নির্ধারিত কোনো ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়নি। ফলে প্রতিদিনের বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে, যার কারণে দুর্গন্ধ ও ময়লা-আবর্জনায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বলেন, “আমরা খুব কষ্টে আছি। একটু হাওয়া খেতেও বাইরে বের হতে পারি না, কারণ চারপাশে শুধু দুর্গন্ধ।” হাবিবুর রহমান বলেন, “সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া আবাসনের পরিবেশ রক্ষা সম্ভব নয়।”

আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করা হয় আবাসন এলাকাজুড়ে। আয়োজক সংগঠনগুলো জানান, এই কর্মসূচি কেবল প্রতীকী নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সূচনা। বক্তারা বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই এমন এলাকায় পরিবেশ সচেতনতামূলক কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।

শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, “আমরা যতই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের কথা বলি, পরিবেশ ধ্বংস করে কোনো উন্নয়নই স্থায়ী হবে না। তাই আগে পরিবেশ, তারপর উন্নয়ন—এই ধারাটিই আমাদের মেনে চলতে হবে।”