বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার ও মজুরি সংকট নতুন কিছু নয়। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি গোটা জাতিকে নাড়া দিয়েছে। সরকারের পতনের পর বহু প্রভাবশালী মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে গোপনে দেশত্যাগ করেছেন কিংবা আত্মগোপনে রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
শনিবার (৩ মে), মহান মে দিবস উপলক্ষে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘ছায়া সংসদ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি জানান, এসব পালিয়ে যাওয়া মালিক ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এলার্ট জারির প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি তাদের জমি, বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, “আমার শ্রমিককে আমি দেখবো—এমন মানসিকতা এখনও মালিকদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি।” তিনি বলেন, অতীতে শাসনের পাশাপাশি শোষণের মাধ্যমে শিল্পখাতকে রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। বহু কারখানার মালিক ছিলেন রাজনীতিক, সংসদ সদস্য, এমনকি প্রভাবশালী মন্ত্রী। এরই ফলশ্রুতিতে রানা প্লাজার মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার দায় সরকার এড়াতে পারে না।
রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭ দিন পর রেশমা নামক নারী শ্রমিকের উদ্ধার নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, একে ‘সাজানো নাটক’ বলেও আখ্যা দেন।
অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, “মে দিবস আসে যায়, কিন্তু শ্রমিকের ভাগ্য বদলায় না। দেশের ৮ কোটি শ্রমজীবীর মধ্যে ৮৫ শতাংশেরই নেই আইনগত বা সামাজিক সুরক্ষা।” তিনি আরও বলেন, “জুলাই বিপ্লবে প্রাণ দিয়েছেন ১১২ শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষ, কিন্তু তাদের স্বপ্ন আজও অপূর্ণ।”
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, “শুধু বক্তৃতা নয়, নির্বাচনী ইশতেহারেই শ্রমিকের ন্যায্য মজুরির প্রতিশ্রুতি দিন। এতে ভোট বাড়বে, কমবে না।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সরকার পতনের সুযোগে কিছু দেশি-বিদেশি অপশক্তি পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন খাতে বিশৃঙ্খলা ছড়াতে চেয়েছিল। শ্রমিক আন্দোলনের নামে যারা উস্কানি দিয়েছে, তাদের অনেকেই প্রকৃত শ্রমিক বা নেতা নন। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।
‘শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় মালিক অপেক্ষা শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব বেশি’ শীর্ষক ছায়া সংসদ প্রতিযোগিতায় তেজগাঁও কলেজ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়। চ্যাম্পিয়ন দল পায় ৫০ হাজার টাকা, রানারআপ দল ৩০ হাজার টাকা সহ ট্রফি ও সনদপত্র।