ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সর্বশেষ বিমান হামলায় আবারও রক্তাক্ত হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়কালে আইডিএফের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৪৩ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭৭ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হামাসের ইসরায়েলে আকস্মিক হামলার জবাবে শুরু হয় ইসরায়েলি অভিযানের প্রথম ধাপ। এরপর গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ধারাবাহিক হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৫২ হাজার ৪১৮ জন ফিলিস্তিনি, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার। আরও মর্মান্তিক তথ্য হলো, এসব হতাহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
হামাসের ২০২৩ সালের হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হওয়ার ঘটনায় টানা অভিযানের ঘোষণা দেয় নেতানিয়াহু সরকার। যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও তা টেকেনি। ১৮ মার্চ থেকে ফের শুরু হয় আইডিএফের দ্বিতীয় ধাপের সামরিক অভিযান। এই নতুন অভিযানে গত দেড় মাসেই প্রাণ হারিয়েছেন আরও অন্তত ২ হাজার ৩ শতাধিক ফিলিস্তিনি, আহত ছয় হাজারের বেশি।
জিম্মিদের মুক্তির দাবিকে সামনে রেখে আইডিএফ জানায়, এখনও অন্তত ৩৫ জন জিম্মি জীবিত রয়েছেন এবং তাদের উদ্ধারে অভিযান চলবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন না করা এবং সব জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান বন্ধ হবে না।
এদিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে ইতোমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মামলা দায়ের করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও রাষ্ট্র। যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আবারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। বিধ্বস্ত অবকাঠামো, ধ্বংসপ্রাপ্ত হাসপাতাল এবং খাদ্য ও পানির ঘাটতি গোটা উপত্যকায় সংকট আরও ঘনীভূত করেছে। শিশুর কান্না আর ধ্বংসের ধোঁয়ার মাঝে গাজাবাসী যেন এক দীর্ঘ যুদ্ধের বুকে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।