সজীব খান, মাদারীপুর।। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের চাঁন্দেরচর হাট সংলগ্ন জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে ভয়াবহ আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ১২ বছর ধরে মসজিদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা লতিফ মুন্সি এবং সেক্রেটারির দায়িত্বে আছেন মজিদ মৃধা।
এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে মসজিদের প্রায় ২ কোটি টাকার কোনো স্বচ্ছ হিসাব পাওয়া যায়নি।
তদন্তে জানা গেছে, মসজিদের দোতলা ভবন নির্মাণের জন্য তৎকালীন মাদারীপুর জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ আসে ৮২ লাখ টাকা। সেই সময় নির্মাণকাজের ঠিকাদারি দায়িত্বেও ছিলেন লতিফ মুন্সি নিজেই। তবে তিনি দাবি করেন, বরাদ্দকৃত অর্থে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব ছিল না। তাই তৎকালীন সংসদ সদস্য লিটন চৌধুরীর নির্দেশে মসজিদের নিচে থাকা ২২টি দোকানের মধ্যে ১৬টি দোকান ৫ থেকে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে বাকি অর্থ সংগ্রহ করা হয়।
স্থানীয়দের মতে, ১২ বছর আগে ঐ ধরনের একটি স্থাপনার ব্যয় ৬০ লাখ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ, প্রকৃত ব্যয় ছাড়িয়ে যায় প্রায় ২ কোটি টাকা। দোকান বিক্রির চুক্তিপত্র না থাকা এবং হাটের বার্ষিক অনুদানের হিসাব না দেওয়া—এই দুই বড় অভিযোগ ঘিরে উঠেছে দুর্নীতির প্রশ্ন। এলাকাবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী, চাঁন্দেরচর হাট থেকে প্রতিবছর প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা মসজিদ কমিটির কাছে অনুদান দেওয়া হলেও, গত ১২ বছরে তার কোনো হিসাব নেই।
সাংবাদিকরা আয়-ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সেক্রেটারি মজিদ মৃধা জানান, “আমার কাছে কোনো হিসাব নেই। সব হিসাব লতিফ মুন্সির কাছে।” অপরদিকে, সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লতিফ মুন্সি। তবে উমেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামান মুন্সি বলেন, “লতিফ মুন্সি আজ পর্যন্ত কোনো প্রকার হিসাব কাউকে বুঝিয়ে দেননি। তার অনিয়মের শেষ নেই। হাটের ইজারাও তিনি নিজের ও স্ত্রী রেহানা পারভীনের নামে নিয়ে আসছেন, যা সরকারি চাকরির বিধিবিধানের লঙ্ঘন।”
স্থানীয় মুসল্লি ও সাধারণ জনগণের দাবি, মসজিদের প্রতিটি খরচের হিসাব প্রকাশ করতে হবে। তারা বলেন, “আমরা দুর্নীতিবাজকে মসজিদের প্রধান হিসেবে চাই না।” এ বিষয়ে তারা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।