নোয়াখালীতে অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে চরম দুর্ভোগ, ৪৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি

নোয়াখালীতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানি একত্রে মিশে সৃষ্টি করেছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ও দুর্ভোগ। গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) জেলায় ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ। এতে জেলার উপকূলীয় অঞ্চলগুলো, বিশেষ করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর, চরহাজারী, চরএলাহী ও হাতিয়ার নিম্নাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, লঘুচাপের কারণে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হওয়ায় জোয়ারের তোড়ে কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে বহু ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে মাছের ঘের, পুকুর এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল।
দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনা নদীতে পণ্যবাহী ট্রলার এমভি প্রাহিম ডুবে গেছে, এতে প্রায় ৪ কোটি টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি রয়েছে এবং সাগর এখনও উত্তাল।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নিঝুমদ্বীপসহ হাতিয়ার বিভিন্ন চরের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করে। ফলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে পড়ে। হুমকির মুখে পড়ে জাতীয় উদ্যানের হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীও। নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা মোমিন বাবলু জানান, শুক্রবার সকালেও সেখানে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঝড়ো হাওয়ার কারণে টানা তিন দিন ধরে হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
বেড়িবাঁধ না থাকায় সহজেই প্লাবিত হয় নিঝুমদ্বীপের মতো এলাকা। এতে ওই ইউনিয়নের প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রধান সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে, ঢুকে পড়েছে অনেক বাড়িতে।
এছাড়া, টানা বর্ষণে জেলা শহর মাইজদীর ফ্ল্যাট রোড, শিল্পকলা একাডেমি এলাকা, হাকিম কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমদ জানিয়েছেন, বৈরী আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে প্রশাসনের। জানমাল রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেডক্রিসেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ করছে।