ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে সাময়িক জয়, আপিল আদালতের স্থগিতাদেশে উত্তেজনা

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিতর্কিত শুল্ক নীতির পক্ষে সাময়িকভাবে আদালতের সমর্থন পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত এক আদেশে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত আমদানি শুল্ক সাময়িকভাবে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
এর ফলে ট্রাম্প প্রশাসন উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ পেল। এর আগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত (কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড) এক রায়ে শুল্ক আরোপকে প্রেসিডেন্টীয় ক্ষমতার অপব্যবহার বলে আখ্যা দিয়ে বেশিরভাগ শুল্ক বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি এবং মাদক পাচারকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করে একাধিক দেশের পণ্যের ওপর একতরফা শুল্ক আরোপ করেছিল। যদিও এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক বাণিজ্য কাঠামোয় অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায়।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানিয়েছে, আদালতের প্রাথমিক রায়ে হোয়াইট হাউসকে ১০ দিনের মধ্যে বিতর্কিত শুল্ক বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে আপিল আদালত সেই রায় স্থগিত করে সাময়িকভাবে শুল্ক বহাল রাখার আদেশ দেয়।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট এই রায়কে ‘বেপরোয়া বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টকে অবশ্যই এই চ্যালেঞ্জের অবসান ঘটাতে হবে।’ তাঁর দাবি, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শুল্ক আরোপের আরও অনেক আইনগত পথ ব্যবহার করতে পারেন।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক কেভিন হাসেট জানান, “কিছু আইনি ধাক্কা থাকলেও এটি বাণিজ্য আলোচনায় প্রভাব ফেলবে না।” তিনি জানান, তিনটি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেন, “আদালতের রায়ের পরও বেশ কিছু দেশ ইতিবাচকভাবে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।”
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসে ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষিত অধিকাংশ শুল্ক বাতিল হলেও স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম এবং আমদানি করা গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে।
চীন এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে— আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুক্তিসঙ্গত আহ্বানে সাড়া দিয়ে যেন যুক্তরাষ্ট্র একতরফা শুল্ক পুরোপুরি বাতিল করে।
এদিকে বৃহস্পতিবার এশিয়া ও মার্কিন বাজারে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেলেও ইউরোপীয় বাজারে সামান্য পতন হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালত প্রশ্ন তুলেছে— ১৯৭৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনোমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট (IEEPA) আইন ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট যদি প্রায় সব দেশের পণ্যের ওপর সীমাহীন শুল্ক আরোপের ক্ষমতা পায়, তবে তা সাংবিধানিক কি না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে। তবে এটি শুল্কযুদ্ধের ইতি নয়, বরং আইনি লড়াইয়ের আরও একটি ধাপ মাত্র।