অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো একটি বর্বরোচিত হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। বোমা বর্ষণের লক্ষ্যবস্তু ছিল একটি স্কুল, যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। হতাহতদের মধ্যে রয়েছেন রেড ক্রস কর্মী, সাংবাদিক, নারী ও শিশু।

নিহতদের মধ্যে অন্যতম হলো গাজার সর্বকনিষ্ঠ সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, মাত্র ১১ বছর বয়সী ইয়াকিন হাম্মাদ।

আল জাজিরা জানায়, স্কুলটিতে আশ্রয় নেওয়া নিরীহ মানুষদের ওপর আচমকা হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুই রেড ক্রস কর্মী ও এক সাংবাদিকও। একইসঙ্গে আহত হয়েছেন অনেক মানুষ, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

মর্মান্তিক এই হামলা ঘটেছে এমন এক সময়, যখন গাজা পূর্ব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (WFP) সতর্ক করেছে, গাজায় বর্তমানে ৭০ হাজারেরও বেশি শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে এবং হাজার হাজার শিশু অনাহারে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে আরও ১২ জন শিশু।

রোববার না খেতে পেয়ে মারা গেছে চার বছরের মোহাম্মদ ইয়াসিন। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, খাদ্য, পানি ও ওষুধের ভয়াবহ ঘাটতির কারণে পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রায় তিন মাস ধরে চলমান অবরোধে গাজার মানবিক অবস্থা চরম সংকটে পৌঁছেছে।

অন্যদিকে, মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের একটি তাঁবুতে হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন এক মা ও তার সন্তানরা। খান ইউনিস, জাবালিয়া এবং বানি সুহেইলার বিভিন্ন এলাকায় হামলায় প্রাণ গেছে আরও অনেকের। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬০০ জন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ শিশু ও নারী।

এদিকে স্পেনের মাদ্রিদে ইউরোপ ও আরব বিশ্বের ২০টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে স্পেন। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের দুই-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের পক্ষে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ও চাপ সৃষ্টি করা।

জাতিসংঘের সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে ইসরায়েলের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ধারাবাহিক বিমান হামলার কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। শিশুদের ওপর সহিংসতা ও মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার দায়ও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

ইয়াকিন হাম্মাদের মৃত্যু সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। মাত্র ১১ বছর বয়সেই তিনি গাজার কণ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। একই হামলায় নিহত হন ডাক্তার আলা আমির আল-নাজ্জারের ১০ সন্তানের ৯ জন। একমাত্র বেঁচে থাকা শিশু আদম মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আইসিইউতে।

গাজা যেন এখন শুধুই ধ্বংসস্তূপ আর কান্নার এক উপত্যকা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবং মানবতার প্রশ্নে এখন বড় প্রশ্নচিহ্ন।