গোপালগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ শেখের মৃত্যুতে শোকের ছায়া

মোঃ সাইফুর রশিদ চৌধুরী, গোপালগঞ্জ।। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি ইউনিয়নের তেলীগাতী গ্রাম হারাল তার ইতিহাসের এক জীবন্ত অধ্যায়। শনিবার (২৪ মে) রাত ৩টা ৩০ মিনিটে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ শেখ (১০৪)। তার মৃত্যুতে গোটা এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বয়সের শতক পেরিয়েও যে মানুষ ছিলেন সুস্থ, সরল ও দৃঢ়চেতা, সেই আলী আহমেদ শেখ ছিলেন ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক চালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী একজন বাঙালি সৈনিক। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ করে তিনি জাতির গর্ব হয়ে ওঠেন।
তিনি শুধু একজন যোদ্ধাই নন, বরং অবসর জীবনে একজন নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবক হিসেবেও ছিলেন পরিচিত। মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রঃ) প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী তেলীগাতী মাদ্রাসার আমরণ খেদমতগার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। বহু বছরের শ্রম ও দানের মাধ্যমে এই মাদ্রাসাকে দৈন্যদশা থেকে উন্নীত করে দিয়েছেন প্রথম শ্রেণির ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
শুধু মাদ্রাসাই নয়, তিনি তার এলাকার আরও অনেক ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। তার জীবনের এই নিঃস্বার্থ কর্মধারা আজও স্থানীয়দের অনুপ্রেরণা জোগায়।
মৃত্যুকালে তিনি পাঁচ পুত্র ও পাঁচ কন্যাসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। মরহুমের সন্তানদের মধ্যে হেদায়েত হোসেন “নাফকো বিল্ডার্স”-এর স্বত্বাধিকারী এবং রোমান শেখ “হুরায়রা বিল্ডার্স”-এর মালিক হিসেবে পরিচিত।
মরহুমের জানাজা শনিবার জোহরের পর তেলীগাতী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজারো মানুষ অংশ নেয়, যারা এক হৃদয়বান বীরকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য জড়ো হয়েছিলেন।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়। গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) মুহম্মদ কামরুজ্জামানের প্রতিনিধি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসতিয়াক মাহমুদ, একটি চৌকস পুলিশ দল এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি সম্মানিত সেনাদল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ শেখের মৃত্যুতে তার পরিবার, এলাকা এবং গোটা জাতি হারাল এক সাহসী যোদ্ধা, একজন নিবেদিত সমাজসেবক এবং একজন আদর্শ মানুষকে।